, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বগুড়া ৪ কাহালু -নন্দীগ্রাম আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ বগুড়া শেরপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১০ প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক টাকা জরিমানা বগুড়া দুপচাঁচিয়ায় দুর্বৃত্তদের হাতে শ্বশুর ও পুত্রবধূ খুন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে তিন ঘন্টার বাজারে বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি বগুড়া নন্দীগ্রামে ৭০গ্রাম হেরোইনসহ আটক তিন বগুড়া ধুনটে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১ বগুড়া ধুনটে ইছামতি নদী থেকে নবজাতক শিশুর লাশ উদ্ধার তৃর্ণমুল পর্য়ায়ে মহিলা দলের কার্য়ক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে—-রেজাউল করিম বাদশা লালমনিরহাটে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি

শিক্ষক কর্তৃক মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে গুলি : অব্যাহতি পেলো ‘অস্ত্র-ব্যবসায়ি’!

  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭৮ পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সিরাজগঞ্জ শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে গুলি ছুড়ে আহত করার ঘটনায় একাধিক মামলার মধ্যে একটি মামলা থেকে কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি অভিযুক্ত সোহাগকে রহস্যজনক বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশের চার্জশিট জমা ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে। এ মামলায় শিক্ষক রায়হানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, গত বছরের ৪ মার্চ সিরাজগঞ্জ শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক রায়হান শরীফ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি ছুড়ে আহত করে। ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর ঘটনায় শিক্ষক রায়হানের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে আঘাত পেলেও বর্তমানে সুস্থ্য।অবৈধ উপায়ে সংগ্রহিত লাইসেন্সবিহীন দু’টি বিদেশী পিস্তল, দু’টি জাপানী সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছোড়া ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলিসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। শিক্ষার্থীর বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন ও ডিবি পুলিশ তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার হন শিক্ষক রায়হান। পরবর্তীতে জামিন নিয়ে পলাতক শিক্ষক রায়হান।ঘটনার পর থেকে উধাও ছিলো ‘অস্ত্র ব্যবসায়ি’ সোহাগও।  গ্রেপ্তারের পরদিন চিকিৎসক রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি ও জবানবন্ধি দেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার হারুন-অর-রশিদের ছেলে ‘হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতা’মামলার আসামী এস.এস. আল হোসাইন ওরফে সোহাগের কাছ থেকে বিগত দিনে অস্ত্র কিনেছেন মর্মে স্বীকারোক্তি দেন শিক্ষক রায়হান। অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি সোহাগ ও শিক্ষক রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। শিক্ষার্থীর বাবাও শিক্ষক রায়হানকে আসামী করে আরেকটি মামলা করেন। দু’মাস পর আদালতে সেটির চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর সম্প্রতি অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ধারার পৃথক মামলাটির চার্জশিট দেয় ডিবি। কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি অভিযুক্ত সোহাগকে রহস্যজনক বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশের চার্জশিট জমা ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে।  অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি তদন্তের নীতিমালার বাইরে গিয়ে বিধি বর্হিভুতভাবে এ কাজটি করেছেন ডিবির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হক ও ইউনিট ওসি মো: একরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার বাবাও। স্বরাস্ট্র মন্ত্রানালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও রেঞ্জ ডিআইজির মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্ত এবং সিআইডি-পিবিআই পুলিশ দিয়ে গ্রহনযোগ্য তদন্তেরও দাবি তাদের।

কি ঘটেছিলো সেদিন কলেজে- ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র, চাকুৃ ও গুলি নিয়ে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের সামনে ‘পোষাপাখি’ বলেও পিস্তল চুম খেতেন শিক্ষক রায়হান। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেন না। সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিরুল হোসেন চোধুরীও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে নিশ্চুপ থাকতেন। সেদিন দুপুরে আইটেম ক্লাস নেবার সময় অস্ত্র প্রদর্শনকালে শিক্ষার্থী তমাল প্রতিবাদ করায় শেষপর্যন্ত তার দিকে পিস্তুল তাক করে গুলি ছোড়েন শিক্ষক রায়হান।

কে এই রায়হান শরীফ-সিরাজগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান মেধাবী হলেও ছোট বেলা থেকে সাইকো স্বভাবের। সবুজকানন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, এরপর সিরাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি, শেষে রাজশাহী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। স্কুলের সাবেক শিক্ষক আব্দুল্লাহ হীরাও গুলির ছোড়ার ঘটনায় প্রাপ্তন ছাত্র শিক্ষক রায়হানের জন্য আক্ষেপ করেন।রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সংগঠনের কলেজ শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন রায়হান। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়া অবস্থায় হলিউড ও বলিউড ফিকশন মুভি দেখে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর জন্য অবৈধ বিদেশ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ জাপানী সামুরাই ও বার্মিচ চাকু সংগ্রহ করতেন। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে পড়া অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের বড় ভাই সাইফুজ্জামান উপলের মাধ্যমে অস্ত্র মাফিয়ার সোহাগের দেখা পান রায়হান।দশ বছর পর সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হয়ে সোহাগের মাধ্যমে আধুনিক নতুন অস্ত্র কেনে শিক্ষক রায়হান। সোহাগই তার অস্ত্র ও গোলাবারুদের যোগানদাতা। গ্রেপ্তারের পর শিক্ষক রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দেন। সিরাজগঞ্জ ডিবির এস আই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও তিনি এ বিসয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার ইউনিটের প্রধান বর্তমান ওসি মো: ইকরামুল হোসাইন অভিযুক্ত সোহাগকে অব্যাহতির রূপকার বলেও অভিযোগ রয়েছে। আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে তিনি পুলিশের পিপিএম পদকও নিতে ঢাকায় গেছেন।পদক নিতে ঢাকা যাবার আগে তিনি মুঠোফোনে দাবি করেন, ‘ডা: রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় সেদিন বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তার বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদি এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি জড়িত নয়। বিএনপি করার কারনে এক সোহাগের বিরুদ্ধে একাধিক রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে হয়রানী করতেই সাবেক পুলিশ সুপার ও ওসি পঙ্গু সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান সে সময়ে অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। ’সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কথা : : সাবেক এসপি আরফিুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন,‘আদালতে দায় স্বীকার করে চিকিৎসক রায়হান জবানবন্ধীতে ভেড়ামারার নওদাপাড়ার হারুন-অর-রশিদের ছেলে খুন,অস্ত্র-নাশকতা মামলার আসামী এস.এস. আল হোসাইন সোহাগের নাম উঠে আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক রায়হানের সাথে মোবাইল কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হয়ে এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ রিমান্ডে নিয়েও সিরাজগঞ্জের শিক্ষকের মামলায় সোহাগকে শৌন এরেষ্ট দেখায়। জামিন পেয়ে পরে সে পলাতক।’সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেবার বিষয়টি আত্মঘাতি ও একেবারেই তদন্তের নীতিমালার বাইরে।’ সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন বলেন, ‘সোহাগ বড় ধরনের অস্ত্র ব্যবসায়ি ও মাফিয়া, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। শিক্ষক রায়হান ১০ বছর থেকে সোহাগের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেন বলে জানিয়েছেন। সোহাগ এতটাই ধুর্ত কুষ্টিয়া-ভেড়ামারায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারিনি।’ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমাল বর্তমানে ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক রায়হান একজন সাইকো। তা না হলেও ক্লাসে ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র আনবেন কেন। তার যেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ, ঠিক অস্ত্র সরবরাহকারী মাফিয়া কুষ্টিয়ার ভেরামারা সোহাগের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির প্রত্যাশা আমাদের। চার্জশিট থেকে সোহাগ অব্যাহতি পেলো, সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশের উর্ধ্বতনদের কাছে দাবি করেন তমাল।অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হানের বাবা সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,চিকিৎসার ভুয়া ব্যবস্থাপত্র ও ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র উপস্থাপন করে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ব্যাবসায়ি মাফিয়া সোহাগকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার ছেলেকে উদ্দ্যেশমুলক ফাঁসিয়েছে ডিবি পুলিশ। যেহেতু ছেলে আসামী,আমরা সত্যিটাও বলতে পারছিনা। ছেলে উন্মাদ হয়ে কোথায় গেছে তাও জানিনা।’অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফ সোমবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘ মানসিকভাবে খুবই বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি অবগত নই।’ তার বাবা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন বলেন, ‘অস্ত্র ব্যবসায়ি সোহাগকে অব্যাহতি দিয়ে আমার ছেলেকে সুকৌশলে ও পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে সিরাজগঞ্জের ডিবি পুলিশ।’কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি ও ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবকদলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি এসএস আল হোসাইন সাহাগ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ি নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। চিকিৎসক রায়হানকেও চিনি না। মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে গুলি-অস্ত্র ক্রয়ের উল্লেখিত ঘটনর সময় আমি কুষ্টিয়া-ঢাকা-ভারতে চিকিৎসাধিন ছিলাম। তার সকল প্রমান আমার কাছে রয়েছে।

পুলিশের উর্ধ্বতদের কথা : চার্জশিটসহ অনুসঙ্গী নথিপত্র হোয়াটসঅ্যাপে দেখে সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: ফারুক হোসেন সোমবার বলেন, ‘পু্লিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকা এসেছি। ফিরে এসে কথা বলবো।রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান সোমবার বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি আমি নিজে আগামীতে খতিয়ে দেখবো।’সিরাজগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই প্রশিক্ষনে ঢাকায় আছেন। তার দপ্তরের এসআই আসলাম ও মুন্সী (করনিক) মালেক জানান, ‘চার্জশিট ইত:মধ্যেই আদালতে গৃহিত হয়েছে। ওই আদালতের আইনজীবি নাজমুল ইসলাম জানান বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় চাইলে অন্য সংস্থাকে দিয়েও পুন:তদন্ত করাতে পারেন।

জনপ্রিয়

বগুড়া ৪ কাহালু -নন্দীগ্রাম আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ

শিক্ষক কর্তৃক মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে গুলি : অব্যাহতি পেলো ‘অস্ত্র-ব্যবসায়ি’!

প্রকাশের সময় : ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সিরাজগঞ্জ শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে গুলি ছুড়ে আহত করার ঘটনায় একাধিক মামলার মধ্যে একটি মামলা থেকে কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি অভিযুক্ত সোহাগকে রহস্যজনক বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশের চার্জশিট জমা ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে। এ মামলায় শিক্ষক রায়হানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জানা যায়, গত বছরের ৪ মার্চ সিরাজগঞ্জ শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক রায়হান শরীফ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি ছুড়ে আহত করে। ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর ঘটনায় শিক্ষক রায়হানের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে আঘাত পেলেও বর্তমানে সুস্থ্য।অবৈধ উপায়ে সংগ্রহিত লাইসেন্সবিহীন দু’টি বিদেশী পিস্তল, দু’টি জাপানী সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছোড়া ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলিসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। শিক্ষার্থীর বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন ও ডিবি পুলিশ তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার হন শিক্ষক রায়হান। পরবর্তীতে জামিন নিয়ে পলাতক শিক্ষক রায়হান।ঘটনার পর থেকে উধাও ছিলো ‘অস্ত্র ব্যবসায়ি’ সোহাগও।  গ্রেপ্তারের পরদিন চিকিৎসক রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি ও জবানবন্ধি দেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার হারুন-অর-রশিদের ছেলে ‘হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতা’মামলার আসামী এস.এস. আল হোসাইন ওরফে সোহাগের কাছ থেকে বিগত দিনে অস্ত্র কিনেছেন মর্মে স্বীকারোক্তি দেন শিক্ষক রায়হান। অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি সোহাগ ও শিক্ষক রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। শিক্ষার্থীর বাবাও শিক্ষক রায়হানকে আসামী করে আরেকটি মামলা করেন। দু’মাস পর আদালতে সেটির চার্জশিট বা অভিযোগপত্র দেয়া হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর সম্প্রতি অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ধারার পৃথক মামলাটির চার্জশিট দেয় ডিবি। কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি অভিযুক্ত সোহাগকে রহস্যজনক বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশের চার্জশিট জমা ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে।  অভিযোগ উঠেছে, পুলিশি তদন্তের নীতিমালার বাইরে গিয়ে বিধি বর্হিভুতভাবে এ কাজটি করেছেন ডিবির বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজমুল হক ও ইউনিট ওসি মো: একরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত চার্জশিট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার বাবাও। স্বরাস্ট্র মন্ত্রানালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও রেঞ্জ ডিআইজির মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্ত এবং সিআইডি-পিবিআই পুলিশ দিয়ে গ্রহনযোগ্য তদন্তেরও দাবি তাদের।

কি ঘটেছিলো সেদিন কলেজে- ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র, চাকুৃ ও গুলি নিয়ে ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীদের সামনে ‘পোষাপাখি’ বলেও পিস্তল চুম খেতেন শিক্ষক রায়হান। ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেন না। সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিরুল হোসেন চোধুরীও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে নিশ্চুপ থাকতেন। সেদিন দুপুরে আইটেম ক্লাস নেবার সময় অস্ত্র প্রদর্শনকালে শিক্ষার্থী তমাল প্রতিবাদ করায় শেষপর্যন্ত তার দিকে পিস্তুল তাক করে গুলি ছোড়েন শিক্ষক রায়হান।

কে এই রায়হান শরীফ-সিরাজগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রায়হান মেধাবী হলেও ছোট বেলা থেকে সাইকো স্বভাবের। সবুজকানন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি, এরপর সিরাজগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি, শেষে রাজশাহী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। স্কুলের সাবেক শিক্ষক আব্দুল্লাহ হীরাও গুলির ছোড়ার ঘটনায় প্রাপ্তন ছাত্র শিক্ষক রায়হানের জন্য আক্ষেপ করেন।রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সংগঠনের কলেজ শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন রায়হান। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়া অবস্থায় হলিউড ও বলিউড ফিকশন মুভি দেখে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর জন্য অবৈধ বিদেশ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিসহ জাপানী সামুরাই ও বার্মিচ চাকু সংগ্রহ করতেন। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে পড়া অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের বড় ভাই সাইফুজ্জামান উপলের মাধ্যমে অস্ত্র মাফিয়ার সোহাগের দেখা পান রায়হান।দশ বছর পর সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হয়ে সোহাগের মাধ্যমে আধুনিক নতুন অস্ত্র কেনে শিক্ষক রায়হান। সোহাগই তার অস্ত্র ও গোলাবারুদের যোগানদাতা। গ্রেপ্তারের পর শিক্ষক রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধী দেন। সিরাজগঞ্জ ডিবির এস আই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও তিনি এ বিসয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার ইউনিটের প্রধান বর্তমান ওসি মো: ইকরামুল হোসাইন অভিযুক্ত সোহাগকে অব্যাহতির রূপকার বলেও অভিযোগ রয়েছে। আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে তিনি পুলিশের পিপিএম পদকও নিতে ঢাকায় গেছেন।পদক নিতে ঢাকা যাবার আগে তিনি মুঠোফোনে দাবি করেন, ‘ডা: রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় সেদিন বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তার বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদি এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি জড়িত নয়। বিএনপি করার কারনে এক সোহাগের বিরুদ্ধে একাধিক রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক উদ্দ্যেশে হয়রানী করতেই সাবেক পুলিশ সুপার ও ওসি পঙ্গু সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান সে সময়ে অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। ’সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কথা : : সাবেক এসপি আরফিুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন,‘আদালতে দায় স্বীকার করে চিকিৎসক রায়হান জবানবন্ধীতে ভেড়ামারার নওদাপাড়ার হারুন-অর-রশিদের ছেলে খুন,অস্ত্র-নাশকতা মামলার আসামী এস.এস. আল হোসাইন সোহাগের নাম উঠে আসে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক রায়হানের সাথে মোবাইল কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হয়ে এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়। কুষ্টিয়া পুলিশ রিমান্ডে নিয়েও সিরাজগঞ্জের শিক্ষকের মামলায় সোহাগকে শৌন এরেষ্ট দেখায়। জামিন পেয়ে পরে সে পলাতক।’সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেবার বিষয়টি আত্মঘাতি ও একেবারেই তদন্তের নীতিমালার বাইরে।’ সাবেক ওসি জুলহাজ উদ্দিন বলেন, ‘সোহাগ বড় ধরনের অস্ত্র ব্যবসায়ি ও মাফিয়া, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। শিক্ষক রায়হান ১০ বছর থেকে সোহাগের কাছ থেকে অস্ত্র কিনেন বলে জানিয়েছেন। সোহাগ এতটাই ধুর্ত কুষ্টিয়া-ভেড়ামারায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারিনি।’ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমাল বর্তমানে ৪র্থ বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক রায়হান একজন সাইকো। তা না হলেও ক্লাসে ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র আনবেন কেন। তার যেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ, ঠিক অস্ত্র সরবরাহকারী মাফিয়া কুষ্টিয়ার ভেরামারা সোহাগের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির প্রত্যাশা আমাদের। চার্জশিট থেকে সোহাগ অব্যাহতি পেলো, সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশের উর্ধ্বতনদের কাছে দাবি করেন তমাল।অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হানের বাবা সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,চিকিৎসার ভুয়া ব্যবস্থাপত্র ও ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র উপস্থাপন করে টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ব্যাবসায়ি মাফিয়া সোহাগকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার ছেলেকে উদ্দ্যেশমুলক ফাঁসিয়েছে ডিবি পুলিশ। যেহেতু ছেলে আসামী,আমরা সত্যিটাও বলতে পারছিনা। ছেলে উন্মাদ হয়ে কোথায় গেছে তাও জানিনা।’অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফ সোমবার সকালে মুঠোফোনে বলেন, ‘ মানসিকভাবে খুবই বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি অবগত নই।’ তার বাবা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন বলেন, ‘অস্ত্র ব্যবসায়ি সোহাগকে অব্যাহতি দিয়ে আমার ছেলেকে সুকৌশলে ও পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়েছে সিরাজগঞ্জের ডিবি পুলিশ।’কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি ও ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবকদলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ি এসএস আল হোসাইন সাহাগ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ি নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। চিকিৎসক রায়হানকেও চিনি না। মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীকে গুলি-অস্ত্র ক্রয়ের উল্লেখিত ঘটনর সময় আমি কুষ্টিয়া-ঢাকা-ভারতে চিকিৎসাধিন ছিলাম। তার সকল প্রমান আমার কাছে রয়েছে।

পুলিশের উর্ধ্বতদের কথা : চার্জশিটসহ অনুসঙ্গী নথিপত্র হোয়াটসঅ্যাপে দেখে সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: ফারুক হোসেন সোমবার বলেন, ‘পু্লিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ঢাকা এসেছি। ফিরে এসে কথা বলবো।রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান সোমবার বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি আমি নিজে আগামীতে খতিয়ে দেখবো।’সিরাজগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর আব্দুল হাই প্রশিক্ষনে ঢাকায় আছেন। তার দপ্তরের এসআই আসলাম ও মুন্সী (করনিক) মালেক জানান, ‘চার্জশিট ইত:মধ্যেই আদালতে গৃহিত হয়েছে। ওই আদালতের আইনজীবি নাজমুল ইসলাম জানান বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় চাইলে অন্য সংস্থাকে দিয়েও পুন:তদন্ত করাতে পারেন।