আব্দুর রাজ্জাক,নীলফামারি প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলায় পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারেরা অতিরিক্ত হাসিল বা খাজনা আদায় করছেন। তাঁরা প্রশাসনের ইজারা শর্ত ও নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না।উপজেলার বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রির রসিদ বই দেখে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, গরু-ছাগল বিক্রিতে সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৮টি। যেগুলো উপজেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। এসব হাটে প্রতিটি গরু ও মহিষের জন্য ৫০০ টাকা এবং প্রতিটি ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা খাজনা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশুর জন্য শুধু ক্রেতারাই খাজনা দেবেন বলা আছে।উপজেলার খোড়ারডাংগা পশুর হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, হাটের কোথাও খাজনা আদায়সংক্রান্ত তালিকা টাঙানো নেই। এতে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত খাজনার পরিমাণ জানতে পারছেন না। প্রতিটি গরুর জন্য ৫০০ টাকা করে খাজনা আদায়ের নিয়ম থাকলেও ১০০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫০০টাকা করে। ছাগলপ্রতি ২০০ টাকা করে খাজনা নির্ধারণ করা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ৪০০ টাকা করে।এই হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন কালিগঞ্জ এলাকার নাজরুল ইসলাম । তিনি জানান বিক্রেতা রশিদুলের সঙ্গে দরদাম করে ৪৮ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে নেন। গরু বিক্রির রশিদ নেওয়ার জন্য ইজারাদারের প্রতিনিধির কাছে যান তারা। ইজারাদারের প্রতিনিধি ক্রেতার কাছে ৫০০ এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা খাজনা দাবি করেন। এ নিয়ে তাঁদের বাগবিতণ্ডা হয়। তবে শেষমেশ ১০০০ টাকা খাজনা দিয়েই হাট ছাড়তে হয় তাদের। নাজরুল ইসলাম বলেন, এক হাজার টাকা নিলেও রসিদে (ছাড়পত্র) খাজনার ঘরে ৫০০ টাকা লেখা হয়। তিনি খাজনার পরিমাণ লেখার জন্য জোর করলে ‘বই (রসিদ) লেখক’ ভ্যাট বাবদ ৫০০ টাকা লিখে দেন। তার মতো সবাইকে ভ্যাট বাবদ ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে।ভ্যাট বাবদ টাকা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, গরু প্রতি ৭০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। হাটের রশিদ বই দিয়ে গরু প্রতি ৫০০ টাকা খাজনা আর ৫০০ টাকা ভ্যাট নেয়া হয়েছে জানালে তিনি বিষয়টি যাচাই করে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।উপজেলার আরও দুইটি পশুর হাট ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। অধিকাংশ হাটেই খাজনা আদায়-সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি টাঙানো হয়নি।উপজেলার ঝুনাগাচ চাপানি হাট সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বুধবার পশুর হাট বসে। আজ রবিবার ওই হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, গরুপ্রতি ১০০০ টাকা করে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রেতার কাছ থেকে ৭০০ টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।আবু কালাম নামে এক ক্রেতা জানান, ৪২ হাজার ও ৬২ টাকা দিয়ে এই হাটে দুটি গরু কিনেছেন। এজন্য ইজারাদারকে দিতে হয়েছে ১৪০০ টাকা। আর বিক্রেতা দিয়েছে ৬০০ টাকা।চাপানি হাটে গরু বিক্রি করতে এসেছিলেন সফিয়ার ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি ২০ বছর ধরে কোরবানির সময় গরু-ছাগল কেনাবেচার ব্যবসা করছেন। সহিদুল জানান, এত দিন গরু বিক্রির জন্য ক্রেতার কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হলেও এবার বিক্রেতার কাছ থেকেও খাজনা আদায় করছেন ইজারাদারেরা।এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, হাট ইজারাদার ইউনুস আলী সাংবাদিক পরিচয় জেনে ব্যাস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, কোরবানির হাটে পশু কেনাবেচায় অতিরিক্ত খাজনা আদায় বা ভ্যাট নেওয়ার সুযোগ নেই। পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।