
টি এম কামালঃ
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় খাইট্টা বিক্রির মৌসুমি বাজার। কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস কাটার জন্য প্রয়োজনীয় এই কাঠের গুঁড়ি-স্থানীয় ভাষায় খাইট্টা-এখন উপজেলার হাটবাজার, মোড় ও পাড়া-মহল্লায় চোখে পড়ার মতো দৃশ্য হয়ে উঠেছে।বিশেষ করে তেঁতুল কাঠের খাইট্টা এবার বেশ চাহিদায়। কারণ এই কাঠের গুঁড়ি দা-ছুরি ব্যবহারে সহজে ক্ষয়ে যায় না, বরং অনেকদিন টিকে থাকে। তাই শুধু পেশাদার কসাই নয়, সাধারণ গৃহস্থরাও খাইট্টা কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী, ঢেকুরিয়া, নাটুয়ারপাড়া, মেঘাই, আলমপুর, গান্ধাইল, সিমান্তবাজার, শিমুলদাইড়, হাটশিরা, হরিনাথপুর, কুমারিয়াবাড়ী, জজিরা, তেকানী সহ বেশ কিছু স্থানে গড়ে উঠেছে এই মৌসুমি খাইট্টার পসরা। বিক্রেতারা কেউ কেউ নিজেরাই স’মিল থেকে তেঁতুল কাঠ কিনে এনে মাপমতো কেটে খাইট্টা তৈরি করছেন।সোনামুখী বাজারে হাটশিরা গ্ৰামের খাইট্টা বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির ঈদ আসলেই খাইট্টার ব্যবসা করি। এবারও স’মিল থেকে তেঁতুল কাঠ কিনে এনে বানাচ্ছি। ছোট সাইজের ২০০ টাকায়, বড় সাইজের ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।’আব্দুর রাজ্জাক নামের আরেক বিক্রেতা জানালেন, ‘দাম জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে অনেকে। কেউ কেউ কিনেও নিচ্ছে। তবে আগের বছরের মতো ভিড় এখনও হয়নি। ধারণা করছি শেষ দুই দিনে বেচাকেনা জমবে।’ মেঘাই বাজারে এক কসাই বলেন, ‘তেঁতুল কাঠের খাইট্টায় দা বসে না, গুঁড়িও উঠে না। তাই আমরা পেশাদার কসাইরা এই কাঠটাই বেশি নিই।’তবে খাইট্টার দাম কিছুটা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা। সিমান্ত বাজারের এক ক্রেতা বলেন, ‘গত বছর ৩০০ টাকায় যেটা কিনেছিলাম, এবার সেটা ৫০০ চাচ্ছে। দামের একটু টান আছে।’ স’মিল মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘তেঁতুল কাঠের সরবরাহ আগের মতো নেই, তাই দাম একটু বেশি। কিন্তু একবার খাইট্টা কিনলে কয়েক বছর টিকে যায়-এই জন্যই সবাই এই কাঠটাই খোঁজে।’প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার সময় দেশের অন্যান্য উপজেলার মতো কাজিপুরেও খাইট্টার চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সারা বছর কিছু কসাই এটি ব্যবহার করলেও ঈদের সময় প্রতিটি বাড়িতে এর প্রয়োজন পড়ে। তাই এই সময়ে উপজেলায় খাইট্টা বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে। সব মিলিয়ে কোরবানির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কাজিপুর উপজেলায় খাইট্টা ব্যবসায় এখন ঈদের আমেজ, যেখানে ঐতিহ্যবাহী কাঠ ব্যবসার সঙ্গে মিলেমিশে তৈরি হচ্ছে মৌসুমি কর্মসংস্থানের সুযোগও।