
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে সাংবাদিক বাড়িতে আসায় আঙ্গুরি বেগম (৭৫) নামে এক বৃদ্ধা নারীকে একঘরে করেছে মাদককারবারিরা। সম্প্রতি উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া গুচ্ছ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে ।
বিধবা নারী আঙ্গুরি বেগম গোমড়া গুচ্ছ গ্রামের ৩০ নং ঘরে বসবাসের পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করে চলে তার জীবন। আঙ্গুরি বেগমের ২ ছেলে ৪ মেয়েসহ বহু নাতি নাতনী থাকলেও কেউ রাখে না তার খোঁজ খবর। বয়সেরভারে কোন কর্ম করতে পারে না আঙ্গুরি বেগম। তবুও থেমে নেই আঙ্গুরি বেগমের বেচে থাকার জীবন যুদ্ধ। কথা বলতে শরীর কাপে আঙ্গুরি বেগমের।
এরপরেও জীবিকার তাগিদে মজুরি করতে যেতে হয় তাকে। একদিন মজুরি করতে না পারলে সেদিন আঙ্গুরি বেগমের ঘরে চুলা জ্বলে না। ঘরে শুয়ার জন্য নেই একটি চৌকি। নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করেন আঙ্গুরি বেগম। গত ২ মাস পুর্বে আঙ্গুরি বেগমের সাথে দেখা হয় শ্যামল বাংলা ২৪ ডটকমের স্টাফ রিপোর্ট ঝিনাইগাতীর খোরশেদ আলমের সঙ্গে। আঙ্গুরি বেগম ঘুরছিলেন একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাওয়ার জন্য।
পরে আঙ্গুরি বেগমের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে সাংবাদিক খোরশেদ আলম আঙ্গুরি বেগমের ভরনপোষণের দায়িত্ব নেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলের সাথে পরামর্শ করেই আঙ্গুরি বেগমের দায়িত্ব নেয়া হয়। গত ২ মাস ধরে আঙ্গুরি বেগম ভরনপোষন করে আসছেন সাংবাদিক। আঙ্গুরি বেগমকে দেখভাল করতে খোরশেদ আলম গুচ্ছ গ্রামে আসা যাওয়া করছিলেন।
এনিয়ে গুচ্ছগ্রামসহ গোমড়া গ্রামের মাদকপাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে পরে। জানা গেছে, ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে গোমড়াও সন্ধ্যাকুড়া গ্রামে অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং মাদককারবারি সিন্ডিকেটে জরিয়ে পরে। এ সীমান্তপথে প্রায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণের মাদক আমদানি করা হচ্ছে ভারত থেকে।
আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মাঝে মধ্যে লাখ লাখ টাকা মূল্যের মাদক উদ্ধার করলেও অপরাধীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না মাদক পাঁচার। আর গোমড়া গ্রামে সাংবাদিকের পদচারনায় মাদককারবারিরা ভিতরে ভিতরে সাংবাদিক খোরশেদ আলমও আঙ্গুরি বেগমের উপর ফুসে উঠতে শুরু করে। খোরশেদ আলমকে সরাসরি কিছু বলতে না পেরে আঙ্গুরি বেগমের সাথে তারা অসদাচরণ শুরু করে।
একপর্যায়ে মাদককারবারিরা স্থানী এক জনপ্রতিনিধির সহায়তায় আঙ্গুরি বেগমকে একঘরে করে রাখে। তাকে তার ঘর থেকে অন্য কোথাও যেতে দেয়া হচ্ছে না। গেলেই গায়ে পরে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টায় লিপ্ত হয় তারা। । তাকে হুমকি দেয়া হয় গুচ্ছ গ্রামের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হবে। অভিযোগ রয়েছে গুচ্ছ গ্রামের সভাপতি ও সম্পাদকের নির্দেশে অন্যান্যরা গুচ্ছগ্রামের কোন নলকূপ থেকে পানি আনতে দেন না।
গত এক মাস ধরে আঙ্গুরি বেগমকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়। ওই সাংবাদিক এলাকায় আসলে তাকেও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ৬ জুলাই রাত ৮ টার দিকে গুচ্ছ গ্রামের নারী পুরুষ ৮/১০ জন আঙ্গুরি বেগমকে তার ঘর থেকে বের করে মারধর করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জানা গেছে, ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নারছেন স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনি।
এ ব্যাপারে আঙ্গুরি বেগম বাদি হয়ে ১০ জনকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন বলেন এ বিষয়ে আঙ্গুরি বেগমের দেয়া একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালে ও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। ফলে আঙ্গুরি বেগম গুচ্ছ গ্রামে চরম বিপাকে নিরাপত্তাহীনতায আসছেন।