, সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

  • প্রকাশের সময় : ১২:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫
  • ১১৯ পড়া হয়েছে

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :

‘মা’ শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। ‘মা’ থেকে মাতৃসেবায় নিয়োজিত লালমনিরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মাতৃমঙ্গল) অফিস সহকারী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অফিসে দীর্ঘ ১৭ বছর বহাল থাকায় তার দুর্নীতি স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

‎অভিযোগ ও অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট শহরের থানা রোডস্থ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি হলো বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল। ২০০৮ সালে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে মনোয়ারা বেগম যোগদান করেন। মনোয়ারা বেগমের স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে গভীর সক্ষতা রয়েছে। তাদের তদবিরে ওই অফিসের হিসাব রক্ষকের দায়িত্বটিও বাগিয়ে নেন। মনোয়ারা বেগম নিজে কম্পিউটারের কাজ না জানলেও, দাপটের সাথে অবৈধ অর্থ উপার্জনের কৌশলটি ঠিকেই জানেন! এভাবেই বছরের পর বছর আওয়ামীলীগ নেতাদের শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে তিনি অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান।

‎অপরদিকে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারকে ম্যানেছ করে দীর্ঘ ১৭ বছর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকায় মনোয়ারা বেগম সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ক্লিনিক্যাল স্টাফ, এসএসিএমও-এফডাব্লুভি, নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া, মিডওয়াইফ, সকল ষ্টাফদের বেতন ও টিএ বিল প্রদানে তার ঘুষ টাকা একেবারেই নির্ধারিত। বেতন ও টিএ বিল ৫০%, স্যাটেলাইট বিল ৫০%, কপারটি বিল ৫০%, মনোহরী বিল ৬০% এবং ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী পিয়ন, আয়া, নৈশপ্রহরীর পোশাক বিল ৫০%, আনুতোষিক ভাতা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন সহ অন্যান্য বিলের টাকা উত্তোলনে মনোয়ারা বেগমকে ঘুষ নামক কমিশন দিতে হয়। এতে মনোয়ারা বেগমকে মোগলহাট এফডাব্লুসি পোশাক বিল বাবদ ৫০% ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় আয়া লায়লা বেগমের সাথে অফিসে ঝগড়া লেগে যায়।

‎একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কম্পিউটার ক্রয়ের টাকা, বিভিন্ন ধরণের ঔষধপত্র, দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়, পুরুষ ও মহিলা বন্ধাকরণ বরাদ্দের অর্ধেকেই লুটপাট। অচল গাড়ীকে সচল দেখিয়ে তেলের টাকা আত্মসাত। মাতৃমঙ্গলের যত প্রকার ঔষধপত্র ও মালামাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই  মনোয়ারা বেগম ক্ষান্ত হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিল-বেতন নিজ নিজ হিসাবে ব্যাংকে জমা হওয়ার নিয়ম থাকলেও মনোয়ারা বেগম তা মানেন না। সবার টাকা তুলে এনে নিজের কাছে রাখেন। নিজের ইচ্ছামতো টাকা কেটে রেখে পরিশোধ করেন।

‎এদিকে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে মনোয়ারা বেগমকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে বদলি করা হয়। ২১ আগস্ট উপজেলা অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র চলে আসেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে তিনি অফিস করেন না। রহস্যজনক কারণে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তাকে কিছুই বলছেন না। ফলে তিনি সারাদিন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বসে দিন কাটিয়ে বাড়িতে যান।

‎নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, আমরা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী। আমাদের ভুল/ভাল বুঝিয়ে জিপিএফ অথবা এনজিও থেকে ঋণ করে নিয়ে মনোয়ারা বেগম পরিশোধ করেন না। এ ভাবে দীর্ঘ ১৭ বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে দুই মেয়েকে সরকারী চাকুরী নিয়ে দেয় এবং ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাদঢালাই বাড়ী নির্মাণ করেন। যা গোপনে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে যে, মনোয়ারা বেগম ১৭ বছরে কি পরিমাণ মাতৃমঙ্গল থেকে দুর্নীতি করেছেন তা বেরিয়ে আসবে।

‎তারা আরো বলেন, মাতৃমঙ্গল থেকে মনোয়ারা বদলিতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। অফিস সহকারী হয়েও ১৭ বছর তিনি এখানকার প্রধান ছিলেন। তার কাছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারও কিছুই না। ফলে তার দুর্নীতির কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিষ্ঠ। তিনি আবারো মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসার চেষ্টা করছেন।

‎এ বিষয়ে মাতৃমঙ্গলের অফিস সহকারী মানোয়ারা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি উপজেলা অফিসে বদলি হয়েছি। উপজেলা অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এসেছি। এ অফিস অডিট হবে আর কিছু কাজ বকেয়া আছে, তাই করছি।

‎এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রবিউল ইসলামকে অফিসে না পেয়ে তার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১২:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৫

লালমনিরহাট প্রতিনিধি :

‘মা’ শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। ‘মা’ থেকে মাতৃসেবায় নিয়োজিত লালমনিরহাট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মাতৃমঙ্গল) অফিস সহকারী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই অফিসে দীর্ঘ ১৭ বছর বহাল থাকায় তার দুর্নীতি স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই অতিষ্ঠ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।

‎অভিযোগ ও অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট শহরের থানা রোডস্থ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি হলো বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল। ২০০৮ সালে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে মনোয়ারা বেগম যোগদান করেন। মনোয়ারা বেগমের স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে গভীর সক্ষতা রয়েছে। তাদের তদবিরে ওই অফিসের হিসাব রক্ষকের দায়িত্বটিও বাগিয়ে নেন। মনোয়ারা বেগম নিজে কম্পিউটারের কাজ না জানলেও, দাপটের সাথে অবৈধ অর্থ উপার্জনের কৌশলটি ঠিকেই জানেন! এভাবেই বছরের পর বছর আওয়ামীলীগ নেতাদের শক্তিশালী খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে তিনি অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান।

‎অপরদিকে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারকে ম্যানেছ করে দীর্ঘ ১৭ বছর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকায় মনোয়ারা বেগম সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা ক্লিনিক্যাল স্টাফ, এসএসিএমও-এফডাব্লুভি, নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া, মিডওয়াইফ, সকল ষ্টাফদের বেতন ও টিএ বিল প্রদানে তার ঘুষ টাকা একেবারেই নির্ধারিত। বেতন ও টিএ বিল ৫০%, স্যাটেলাইট বিল ৫০%, কপারটি বিল ৫০%, মনোহরী বিল ৬০% এবং ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী পিয়ন, আয়া, নৈশপ্রহরীর পোশাক বিল ৫০%, আনুতোষিক ভাতা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন সহ অন্যান্য বিলের টাকা উত্তোলনে মনোয়ারা বেগমকে ঘুষ নামক কমিশন দিতে হয়। এতে মনোয়ারা বেগমকে মোগলহাট এফডাব্লুসি পোশাক বিল বাবদ ৫০% ঘুষ দিতে অস্বীকার করায় আয়া লায়লা বেগমের সাথে অফিসে ঝগড়া লেগে যায়।

‎একটি বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কম্পিউটার ক্রয়ের টাকা, বিভিন্ন ধরণের ঔষধপত্র, দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়, পুরুষ ও মহিলা বন্ধাকরণ বরাদ্দের অর্ধেকেই লুটপাট। অচল গাড়ীকে সচল দেখিয়ে তেলের টাকা আত্মসাত। মাতৃমঙ্গলের যত প্রকার ঔষধপত্র ও মালামাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি করেই  মনোয়ারা বেগম ক্ষান্ত হয়নি। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিল-বেতন নিজ নিজ হিসাবে ব্যাংকে জমা হওয়ার নিয়ম থাকলেও মনোয়ারা বেগম তা মানেন না। সবার টাকা তুলে এনে নিজের কাছে রাখেন। নিজের ইচ্ছামতো টাকা কেটে রেখে পরিশোধ করেন।

‎এদিকে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে মনোয়ারা বেগমকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে বদলি করা হয়। ২১ আগস্ট উপজেলা অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র চলে আসেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে তিনি অফিস করেন না। রহস্যজনক কারণে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তাকে কিছুই বলছেন না। ফলে তিনি সারাদিন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বসে দিন কাটিয়ে বাড়িতে যান।

‎নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, আমরা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী। আমাদের ভুল/ভাল বুঝিয়ে জিপিএফ অথবা এনজিও থেকে ঋণ করে নিয়ে মনোয়ারা বেগম পরিশোধ করেন না। এ ভাবে দীর্ঘ ১৭ বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে দুই মেয়েকে সরকারী চাকুরী নিয়ে দেয় এবং ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাদঢালাই বাড়ী নির্মাণ করেন। যা গোপনে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে যে, মনোয়ারা বেগম ১৭ বছরে কি পরিমাণ মাতৃমঙ্গল থেকে দুর্নীতি করেছেন তা বেরিয়ে আসবে।

‎তারা আরো বলেন, মাতৃমঙ্গল থেকে মনোয়ারা বদলিতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। অফিস সহকারী হয়েও ১৭ বছর তিনি এখানকার প্রধান ছিলেন। তার কাছে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারও কিছুই না। ফলে তার দুর্নীতির কারণে উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিষ্ঠ। তিনি আবারো মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসার চেষ্টা করছেন।

‎এ বিষয়ে মাতৃমঙ্গলের অফিস সহকারী মানোয়ারা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি উপজেলা অফিসে বদলি হয়েছি। উপজেলা অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এসেছি। এ অফিস অডিট হবে আর কিছু কাজ বকেয়া আছে, তাই করছি।

‎এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রবিউল ইসলামকে অফিসে না পেয়ে তার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।