
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: পূর্বের ঘটনার জের ধরে ব্যক্তি স্বার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে রাতের আঁধারে অতর্কিত হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হন পল্লী প্রাণী চিকিৎসক ও উলিপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি রাজিব মেহেদী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ দাবিকে কেন্দ্র করে ৫ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থী ও একাংশ শিক্ষকের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গত রবিবার (৩১ আগস্ট ২০২৫) সকাল ১১টার দিকে অধ্যক্ষ নতুন তিনজন শিক্ষককে মাদ্রাসায় যোগদানের জন্য আনলে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী লাঠিসোটা নিয়ে অধ্যক্ষের দিকে তেড়ে আসে। শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ বাধা দিতে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষক আলিম আল রেজা মারধরের শিকার হন।
এরই জেরে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) অধ্যক্ষ অনুপস্থিত থাকাকালে শিক্ষক আলিম আল রেজা ও তাঁর অনুসারীরা ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটাতে বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেন এবং রাতে শিক্ষার্থীদের দিয়ে অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটান। হামলাকারীরা পল্লী প্রাণী চিকিৎসক রাজিব মেহেদীর গাড়ি ভাঙচুর করে এবং তাঁর কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
হামলার শিকার রাজিব মেহেদী বলেন, “বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন শেষে রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে উলিপুর ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম পাশে কয়েকজন লাঠিসোটা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি গাড়ি থামাতেই তারা অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে আমি চিনতে পেরেছি। ওরা বাকরের হাট ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত ছিল শিক্ষক আলিম আল রেজা আমি নিশ্চিত হতে পেরেছে, আমার গাড়ির সামনের অংশে আঘাত করে। আমি কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।”
মাদ্রাসা বন্ধের ও হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক আলিম আল রেজা বলেন, “সকল শিক্ষকের সমন্বয়েই মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আর হামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কে বা কারা মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। রাতের হামলার ঘটনাও আমার জানা নেই।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, “মাদ্রাসা বন্ধের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বা ছুটি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন।”
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি জিল্লুর রহমান জানান, ৩১ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং পাঠদান বিঘ্নিত না হয়।