
শফিকুল ইসলাম স্বাধীন সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী রূপনগর এলাকায় ভারতীয় গরু আটককে কেন্দ্র করে চোরাকারবারিদের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)-এর সংঘর্ষের ঘটনায় নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর টাঙ্গুয়ার হাওরে ভেসে উঠল নৌকার মাঝি ওমর ফারুকের লাশ। এ ঘটনায় বিজিবির একজন সদস্যসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাঙ্গালভিটা বিজিবি ক্যাম্পের টহল দল সীমান্ত পিলার ১১৯০/১৫-এস সংলগ্ন রূপনগর এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ভারতীয় গরুভর্তি একটি ট্রলার নিয়ে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দল বাংলাদেশে প্রবেশ করলে বিজিবি তাদের চ্যালেঞ্জ জানায়।
চ্যালেঞ্জের মুখে প্রায় ১০০-১২০ জন চোরাকারবারি বিজিবিকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং গাদা বন্দুক দিয়ে একাধিক রাউন্ড গুলি চালায়। পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিজিবি। এতে বিজিবির নায়েক মো. আখিরুজ্জামান গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। বর্তমানে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংঘর্ষে আরও তিনজন স্থানীয় ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। তাদের মধ্যে দুজন এখনও হাসপাতালে রয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে চোরাকারবারিরা গরু ও ট্রলার ফেলে পালিয়ে যায়। অভিযান শেষে বিজিবি ৩৩টি ভারতীয় গরু, একটি ট্রলার এবং বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে।
এ সময় নিখোঁজ হন ট্রলার চালক ওমর ফারুক। টানা দুই দিন পর মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে মধ্যনগর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার পর সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিজিবির পক্ষ থেকে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে মধ্যনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। আটককৃত গরু, ট্রলার ও দেশীয় অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এর অধিনায়ক লে. কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, চোরাকারবারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের টহল দলের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের একজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা ৩৩টি গরু ও একটি ট্রলার জব্দ করেছি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে মধ্যনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিবুর রহমান জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শরীরে খতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে বিজিবির গুলিতেই নৌকার মাঝি ওমর ফারুকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দাবি, তিনি মূলত নৌকা চালাতেন, চোরাকারবারির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ভিন্নমতও রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, মাঝি হিসেবে তিনি চোরাকারবারিদের বহন করছিলেন।





















