
খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটে আহত ৭০ বছরের বৃদ্ধা মা ও ৬ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করছেন এক মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। একদিন ভিক্ষা করতে না বের হলে বন্ধ থাকে মায়ের ওষুধ সঙ্গে তাদের খাওয়া দাওয়া। চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছে ওই পরিবারটি। মুক্তিযোদ্ধার এক পরিবার সবধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলেও শেফালী ও তার মা হচ্ছেন বঞ্চিত। প্রতিকার পেতে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই পরিবার।
জানা গেছে,৭০ বছরের আহত বৃদ্ধা মজিরন বেগম ও ছয় বছরের ছেলে শাহীন বাবুকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পথে পথে ভিক্ষা করেন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা শেফালী বেগম (৩৪)। লালমনিরহাট পৌরসভার বিডিআর হাট, খোচাবাড়ি এলাকায়, নামমাত্র ভাড়া ঘরে তাদের বসবাস। ঘরের মেঝেতে শুয়ে রয়েছেন শেফালির বৃদ্বা মা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মজিরন বেগম (৭০)। আর ঘরের এদিক সেদিক পড়ে রয়েছে যত্রতত্র জিনিস পত্র। বৃদ্ধা মজিরন একাকী উঠতে না পারায় মেয়ে শেফালীকে মায়ের সেবায় ব্যস্ত থাকতে হয় সবসময়। আর ৬ বছর বয়সী শিশু শাহীন বাবু দুষ্টুমিতে মেতে থাকে যখনতখন। নানির বসে থাকা হুইল চেয়ারের চাকার সাথেই যেন ঘুরছে শিশু শাহীনের সময়ের চাকা। আর কত সময় এভাবে যাবে? শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আসপাশের সবারও অনেক ভাবনা।
জনশ্রুতি রয়েছে একসময় শহরের নোয়াখালী মোড়ে হোটেল ব্যাবসা ছিল বৃদ্ধা মজিরনের। তখন সময় তার ভালো ছিলো। হঠাৎ একদিন এক ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ডান পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি। তার পড়েই ওই পরিবারে নেমে আসে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তান তাদের পরবর্তী প্রজন্মের শাহীন বাবুর ভবিষ্যতও করছে অন্ধকার। আর শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে শেফালীর শিশু সন্তানটিকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মজিরনের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে? সেটিও সবার অজানা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকতার হোসেনের বসত বাড়িতে গেলে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শেফালীকে কিভাবে মেনে নেবো সে আমার অবাধ্য। কন্যা হিসেবে মেনে নিলেও স্ত্রী মজিরনের সাথে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন ২০১৯ সালে৷
ওই মুক্তিযোদ্ধার প্রতিবেশি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান আলী (৬৫), প্রতিবেশী মিরাজসহ অনেকে জানান, শেফালী ও তার মা সহ শিশুটিকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দীর্ঘদিন থেকেই। শেফালী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। শেফালীর বাবার আরেকটি সংসার রয়েছে সেই পরিবার নিয়ে বৃদ্ধ ওই মুক্তিযুদ্ধা বসবাস করেন।
মজিরন, শেফালী আর ৬ বছরের শাহীন বাবুদের ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ, এমনটাই আশা করছেন স্হানীয় এলাকাবাসী।
বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীতা দাস বলেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিশোধ থেকে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে। আর তারা চাইলে অসুস্থ মজিরনের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন করতে পারেন। বরাদ্দ আসলে নিয়ম অনুযায়ী তা প্রদান করা হবে।





















