
মো: আকরাম শাহ বিজয়নগর উপজেলা প্রতিনিধি : হযরত সৈয়দ হুজুরী শাহ (রহ.) ইয়ামানী দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহাসিক সমাবেশ। বাংলাদেশে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিকতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার বলীঘর গ্রামে অবস্থিত হযরত সৈয়দ হুজুরী শাহ (রহ.) ইয়ামানী দরবার শরীফ। ইসলামের বাণী প্রচার, মানবতার কল্যাণ এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের পথ দেখানো এই দরবারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য ও বিশ্বাস। ইতিহাসের আলোকে চার শতকের আধ্যাত্মিক ভ্রমণই সলামের দাওয়াত ও হেদায়েতের আলো নিয়ে প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে ইয়েমেন দেশ থেকে হযরত সৈয়দ হুজুরী শাহ (রহ.) উপমহাদেশে আগমন করেন। তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে সফর করেন, মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে আহ্বান করেন। পরে ৪৫০ বছর আগে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে স্থাপন করেন আধ্যাত্মিক আস্তানা, যা আজও এক বিশাল ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
তার এই আগমন, প্রচার ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে, ফলে বাংলাদেশে সুফিবাদী সংস্কৃতির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে হুজুরী শাহ (রহ.) পরিবার।আজকের আধ্যাত্মিক মিলনমেলা
আজ বলীঘর দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হয় ভক্ত, আশেক, মুরিদ-মাশায়েখ, আওলাদ ও ওয়ারিশদারদের এক বিশাল মহামিলন মেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো ভক্ত এসে একত্রিত হন প্রিয় পীরের দরবারে জিয়ারত করতে এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি অনুভব করতে। পীর জাদা মো: সমছুল আলম খন্দকার মাজার শরীফ পরিচালনা কমিটি বলীঘর
দরবার প্রাঙ্গণ সকাল থেকেই ভরে ওঠে ভক্তদের পদচারণায়। সারা এলাকাজুড়ে ছিল এক পবিত্র, মনোমুগ্ধকর ও আধ্যাত্মিক আবেশ—লাইলাহা ইল্লাল্লাহ, সালাম, সালাত, দোয়া ও মিলাদ শরীফের মাহফিলে পরিবেশিত হয় অগণিত দোয়া।
দরবারের নেতৃত্ব ও আয়োজন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—
হযরত সৈয়দ হুজুরী শাহ দরবার শরীফ, নোয়াগাঁও-এর সভাপতি জনাব ফারুক আহমেদ খন্দকার
সাধারণ সম্পাদক কবির আহাম্মদ
বলীঘর দরবার শরীফ ও নোয়াগাঁও ফকিরবাড়ি বিজয়নগর দরবার শরীফ-এর সভাপতি শামসর আলী শাহ
সাধারণ সম্পাদক মন মিয়া শাহ
এই মহতী আধ্যাত্মিক সমাবেশের সার্বিক তত্ত্বাবধান, দিকনির্দেশনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন—
➡️ জনাব সৈয়দ জেবেল শাহ
➡️ মোঃ আকরাম শাহ, অলির বংশধর ও অনুষ্ঠানের অন্যতম সমন্বয়কারী
তাঁদের নেতৃত্বে দরবারে আগত ভক্তদের জন্য সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, মিলাদ, জিকির, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন আধ্যাত্মিক পর্ব সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।
ভক্তদের চোখে অনুভূতির জোয়ার
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ভক্তবৃন্দ জানান—প্রতি বছর এমন সমাবেশ তাদের জন্য এক বিরাট আধ্যাত্মিক শক্তি ও অনুপ্রেরণা এনে দেয়। তারা বলেন, “পীর-মাশায়েখদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান আমাদের ঈমানি জীবনের অংশ। এই মিলন মেলায় এসে মন-প্রাণ শান্তি পায়।”
দোয়া ও মোনাজাত
দিনব্যাপী আধ্যাত্মিক কর্মসূচির শেষে অনুষ্ঠিত হয় সকলের জন্য বিশেষ মোনাজাত—
দেশের কল্যাণ মুসলিম উম্মাহর শান্তি দরবার শরীফের অগ্রগতি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক শান্তি-সমৃদ্ধি মোনাজাতে হাজারো ভক্ত আবেগে আপ্লুত হয়ে অংশগ্রহণ করেন। হযরত সৈয়দ হুজুরী শাহ (রহ.) ইয়ামানী দরবার শরীফের আজকের এ সমাবেশ শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ছিল ঐতিহ্য, ত্যাগ, আধ্যাত্মিকতা, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার অনন্য মিলন। ৪৫০ বছরের এক সমৃদ্ধ ইতিহাস আজও যেভাবে প্রজন্মকে পথ দেখাচ্ছে, তা সত্যিই অনুকরণীয়



















