
লালমনিরহাট প্রতিনিধি :
লালমনিরহাটে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির ফাইল গায়েবে জড়িতরা আজও অধরা অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানে হাসিনার সরকার পালিয়ে যায়। আত্মগোপন করে মন্ত্রী-এমপিরা। সেই সাথে লালমনিরহাট (আদিতমারী-কালীগঞ্জ-২) আসনের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মদও দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর রংপুরে পুলিশের হাতে আটক হন। নুরুজ্জামান আহম্মেদ মন্ত্রী থাকাবস্থায় কালীগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ছিল মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট আর অফিস সহকারী পারভীন বেগম প্রতিবেশী।
মন্ত্রীর নিজ বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলায় হওয়ায় উপজেলা সমাজসেবায় বরাদ্দ আসতো বেশি বেশি।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের সহযোগীতায় সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ও অফিস সহকারী পারভীন বেগমের যোগসাজশে ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্যান্সার, কিডনী, লিভার, সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, ইন্টাক প্যারালাইজ, থ্যালাসেমিয়া মতো জটিল রোগীদের প্যাকেজ সহায়তায় আওতাধীন রোগী প্রতি ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃত রোগীরা এসব বরাদ্দের টাকা পায়নি। শত শত ভুয়া রোগীর কাগজ তৈরি করে কোটি কোটি টাকা ওই তিনজনেই লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও একই অর্থবছরগুলোতে ওই উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নের প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পান। এতে কামার, কুমার, নরসুন্দর, রবিদাস ও জেলেদের প্রশিক্ষণের বদলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের নাম দিয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচারে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুথানে পর কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবার দুর্নীতির ফাঁস হওয়ার ভয়ে আব্দুর রাজ্জাক ও পারভীন বেগম ফাইল গায়েব নাটক তৈরি করেন। এমনকি দুর্নীতির ফাইল হারিয়েছে বলে ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডি দায়ের করে অফিস সহকারী পারভীন বেগম।
একটি সুত্র জানান, মন্ত্রীর দুর্নীতি ঢাকতে ফাইল গায়েব বিষয়টি জানাজানি হলে গঠন করা হয় এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। ভাগ্যবান হেভীওয়েট তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন লালমনিরহাট সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান। মোটা অংকের টাকার বিনিময় উপ-পরিচালক বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। আব্দুর রাজ্জাকে পীরগঞ্জ সমাজসেবা ও পারভীন বেগমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে সংযুক্ত করে এবং প্রধান অধিদপ্তরে ফাইল হারিয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়ে চুপচাপ থাকে।
অপরদিকে লালমনিরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সামিউল ইসলামের সাথে গোপনে ২ লক্ষ টাকা বিনিময় পারভীন বেগম আবারও কালীগঞ্জ উপজেলায় স্বপদে বদলির আদেশ করিয়ে নেয়। ফলে জেলা জুড়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এদিকে ২০২৫ সালের ২১শে এপ্রিল দুদকের গণশুনানি ছিল লালমনিরহাটে। ওইদিন সমাজসেবার দুর্নীতির ফাইল গায়েব বিষয়টি দুদকে অভিযোগ দায়ের করলে গণশুনানিতে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন।
তবে পারভীন বেগমের বদলির তদরির বিষয়ে অস্বীকার করে জেলা সমাজসেবার সহকারী পরিচালক সামিউল ইসলাম।
আর এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবার উপপরিচালক মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, সার্জিস ও হাসনাত এত টাকা ও গাড়ী বাড়ি কোথায় পেল!। আমার অফিসে ২/৩ কোটি টাকার ঘাপলা আছে। আর অন্যানদের অফিসে ৮/১০ কোটি টাকার ঘাপলা, সেটা তো লেখেন না।