, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

‎লালমনিরহাটে শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রির টাকায় সংসার চালাচ্ছেন অভি

খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট :

লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকার উচাটারী এলাকার একটি  ভাড়া বাসায় বসবাস করেন অসীম সাহসী যুবক অভি।ছোটবেলায় বাবাকে হারানো অভি জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছে। একমাত্র বড় বোনও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এখন মা এবং বোনের সন্তানকে নিয়েই চলছে তার জীবন যুদ্ধ।

‎উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও অভির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে এসএসসি শেষে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরেই প্যারালাইসিসে অভির শরীরের এক পাশ সক্রিয়তা হারায়। এরপর অভির জীবন যুদ্ধ হয়ে ওঠে আরও বেদনাদায়ক।

‎একদিকে দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাত, অন্যদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। সব মিলিয়ে,অভি পড়ে যায় অকূল পাথারে। তবে,এত কিছুর পরেও হার মানেনি এই যুবক।

‎প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার জীবন যুদ্ধ।

‎অভির প্রতিবেশীরা জানান, ভাগ্নে ও মায়ের মুখে দু’বেলা অন্ন তুলে দিতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লালমনিরহাট শহরের হাট বাজারের  দোকানে দোকানে ঘুরে চা বিক্রি করে অভি। একদিন চা বিক্রি করতে না পারলে অনাহারে থাকতে হয় তাদের কেউ সাহায্য করতে চাইলে সেটা গ্রহণ করে না প্রবল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন অভি। এও জানায় তার প্রতিবেশীরা

‎মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে, জমানো সকল অর্থ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও অভিকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিতে পারছেন না তার হতভাগিনী বিধবা মা আজাদী বেগম।

‎অভির মায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “ভালোই চলছিল তাদের সংসার। গত ২০১৮ সালে হঠাৎ একদিন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয় অভি। পরে,লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অভিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। প্রায় নয় মাস মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে, অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেও কেটে যায় অনেকদিন। এখন আমাদের পরিবার একেবারেই নিঃস্ব। চোখের সামনে অসুস্থ ছেলে মানুষের দোকানে দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। মা হয়ে এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।”

‎অভির চায়ের নিয়মিত বেস কিছু কাস্টমারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি নম্র ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির যুবক অভি। সে এসএসসি পাশ করেছে। হঠাৎ প্যারালাইসড হয়ে তার পরিবার এখন সর্বস্বান্ত। তাকে আমরা চিনি। হাত পেতে কারো কাছে সাহায্য চায় না অভি। তার স্বপ্ন নিজে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হবে। তাই,সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে অভিকে সহায়তার আবেদন করেন তারা।

‎এবিষয়ে লালমনিরহাট সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, প্রবল মনোবল সম্পন্ন অভি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও কর্ম করে খাচ্ছেন তাই তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। অভি চাইলে আমাদের সমাজসেবার যে প্রতিবন্ধী ঋণ কার্যক্রম রয়েছে তা গ্রহণ করতে পারেন।” এছাড়াও অভির সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করেন তিনি।

‎বর্তমান সময়ে একটু সমস্যাতেই যখন ভেঙ্গে পড়ি আমরা, তখন অভি যেন দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে মনোবল ঠিক রেখে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। অদম্য সাহসী এই অভি নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক এটাই চাওয়া সকলের।

জনপ্রিয়

পটিয়ায় গৃহকর্তার অনুপস্থিত এ ১২লাখ টাকা চুরি

‎লালমনিরহাটে শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রির টাকায় সংসার চালাচ্ছেন অভি

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

খাজা রাশেদ,লালমনিরহাট :

লালমনিরহাট পৌরসভা এলাকার উচাটারী এলাকার একটি  ভাড়া বাসায় বসবাস করেন অসীম সাহসী যুবক অভি।ছোটবেলায় বাবাকে হারানো অভি জন্মের পর থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছে। একমাত্র বড় বোনও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। এখন মা এবং বোনের সন্তানকে নিয়েই চলছে তার জীবন যুদ্ধ।

‎উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও অভির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে এসএসসি শেষে। একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরেই প্যারালাইসিসে অভির শরীরের এক পাশ সক্রিয়তা হারায়। এরপর অভির জীবন যুদ্ধ হয়ে ওঠে আরও বেদনাদায়ক।

‎একদিকে দারিদ্রতার নির্মম কষাঘাত, অন্যদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। সব মিলিয়ে,অভি পড়ে যায় অকূল পাথারে। তবে,এত কিছুর পরেও হার মানেনি এই যুবক।

‎প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তার জীবন যুদ্ধ।

‎অভির প্রতিবেশীরা জানান, ভাগ্নে ও মায়ের মুখে দু’বেলা অন্ন তুলে দিতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লালমনিরহাট শহরের হাট বাজারের  দোকানে দোকানে ঘুরে চা বিক্রি করে অভি। একদিন চা বিক্রি করতে না পারলে অনাহারে থাকতে হয় তাদের কেউ সাহায্য করতে চাইলে সেটা গ্রহণ করে না প্রবল আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন অভি। এও জানায় তার প্রতিবেশীরা

‎মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে, জমানো সকল অর্থ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকলেও অভিকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিতে পারছেন না তার হতভাগিনী বিধবা মা আজাদী বেগম।

‎অভির মায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “ভালোই চলছিল তাদের সংসার। গত ২০১৮ সালে হঠাৎ একদিন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয় অভি। পরে,লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অভিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। প্রায় নয় মাস মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে, অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেও কেটে যায় অনেকদিন। এখন আমাদের পরিবার একেবারেই নিঃস্ব। চোখের সামনে অসুস্থ ছেলে মানুষের দোকানে দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। মা হয়ে এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয়।”

‎অভির চায়ের নিয়মিত বেস কিছু কাস্টমারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি নম্র ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির যুবক অভি। সে এসএসসি পাশ করেছে। হঠাৎ প্যারালাইসড হয়ে তার পরিবার এখন সর্বস্বান্ত। তাকে আমরা চিনি। হাত পেতে কারো কাছে সাহায্য চায় না অভি। তার স্বপ্ন নিজে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হবে। তাই,সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে অভিকে সহায়তার আবেদন করেন তারা।

‎এবিষয়ে লালমনিরহাট সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, প্রবল মনোবল সম্পন্ন অভি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও কর্ম করে খাচ্ছেন তাই তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। অভি চাইলে আমাদের সমাজসেবার যে প্রতিবন্ধী ঋণ কার্যক্রম রয়েছে তা গ্রহণ করতে পারেন।” এছাড়াও অভির সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করেন তিনি।

‎বর্তমান সময়ে একটু সমস্যাতেই যখন ভেঙ্গে পড়ি আমরা, তখন অভি যেন দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে মনোবল ঠিক রেখে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। অদম্য সাহসী এই অভি নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক এটাই চাওয়া সকলের।