
হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা জগতের ঈশ্বর। যিনি জগতের ঈশ্বর তার অনুগ্রহ ও কৃপা লাভ করলে মানুষের মুক্তি লাভ হবে। এ বিশ্বাস থেকেই জগন্নাথ দেবের মূর্তি নিয়ে রথযাত্রার আয়োজন করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে আয়োজিত হয় এ উৎসব।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বগুড়ার শেরপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেরপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটির উদ্যোগে সুসজ্জিত রত্রযাত্রা শুক্রবার (২৭ই জুন) বেলা ২টার দিকে শহর প্রদক্ষিণ শুরু করে। এসময় শেরপুর শহর বিএনপি’র সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র স্বাধীন কুমার কুন্ডু, শেরপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম কুমার কুন্ডু, সাপ্তাহিক তথ্যমালার সম্পাদক সুজিত কুমার বসাক, শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দীপক কুমার সরকার, টাউনবারোয়ারী রাধা গোবিন্দ মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার সাহা, শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি প্রকাশ সরকার, ডা. অরুনাংশ মন্ডল, অপরেশ বসাক, বৈদ্যনাথ সরকার, শহর পূজা উদযাপন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ অধিকারী শুভ, ভোলানাথ তাম্বুলী, পার্থ সারথী সাহা সহ অণ্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
একই দিনে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উদ্যোগে ও দত্তপাড়া মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে পৃথক দুটো ছোট রথ বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন। ঢাক-ঢোলসহ রথযাত্রায় বিভিন্ন বয়সী শত শত নারী-পুরুষ ভক্ত দেবতার নাম জপ, কীর্তনসহ পুজো অর্চনা পালন করেন।
রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে নিজ নিজ রথে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্র শোভাযাত্রা সহকারে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নিজ মন্দির থেকে সপ্তাহকালের জন্য মাসির বাড়ি গমন করেন। এই বেড়াতে যাওয়ার উৎসবই রথযাত্রা। রথযাত্রা হিন্দুধর্মের, বিশেষত প্রভু জগন্নাথের ভক্তদের কাছে একটি পুণ্য উৎসব এবং পুণ্য তিথিও। এই পুণ্য তিথিতে শ্রী জগন্নাথ ধাম পুরী ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে (যেখানে জগন্নাথদেবের ভক্ত বর্তমান) মহাসমারোহের সঙ্গে রথযাত্রা পালিত হয়। হিন্দুশাস্ত্র মতে রথের দড়ির স্পর্শে (দড়ি টানলে) পুণ্যলাভ হয়।
শেরপুর কেন্দ্রীয় শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রদীপ কুমার কুন্ডু বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে। আশা করি সুন্দরভাবেই শেষ করতে পারবো।
সনাতন ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোন বিশৃঙ্খলা না করতে পারে সেই লক্ষ্যে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় বলে অফিসার ইনচার্জ এস.এম মঈনউদ্দিন জানিয়েছেন।
এদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরে রথযাত্রা উপলক্ষে দিন ব্যাপী বসে রথের মেলে। মেলায় মাটি, কাঠ ও লোহার তৈরি আসবাবপত্র, গৃহস্থালী সামগ্রী, কসমেটিক্স, খেলনা, মনোহারী ও মিষ্টির দোকান বসে।
রথটি বিকালে উপজেলার মহিপুর বারইপাড়ায় মন্দিরে ভোগরাগ শেষে শহরের গোশাইপাড়াস্থ গুন্ডিচা মন্দিরে(জগন্নাথ দেবের মাসীর বাড়ি) ৭দিন থাকবে। আগামী ৫ জুলাই শনিবার রথের উল্টো টানের মধ্য দিয়ে ৮দিন ব্যাপী ধর্মীয় এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।