
লালমনিরহাট প্রতিনিধি ॥
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় এক দাদন ব্যবসায়ীর খপ্পরে দিশেহারা অসহায় পরিবারের দুই গৃহবধূ। নিরুপায় হয়ে দাদন (সুদ) ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র বিরুদ্ধে আদিতমারী থানা পৃথক পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই মামলা আসামী হয়ে এলাকাছাড়া।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সারপুকুর প্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে আসাদুজ্জামান বাবু স্থানীয় সাপ্টিবাড়ী বাজারে কসমেটিক্স ব্যবসা করেন। তার আড়ালে দীঘদিন ধরে দাদন (সুদ) ব্যবসার সাথে জরিয়ে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
এদিকে ২০২৪ সালে একই উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের দোলোয়ার হোসেনের স্ত্রী জাহানুর বেগম তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে বিদেশ পাঠাতে দুই লক্ষ টাকার প্রয়োজন। তাই ১ বছর ৬ মাস পূর্বে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র সাথে জাহানুর বেগম তার নামীও সোনালী ব্যাংক, আদিতমারী শাখার ২টি ফাঁকা চেকের পাতা এবং তার ছেলের স্ত্রীর নামের ২টি ফাঁকা চেকের পাতা, জমির দলিল ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ২ লক্ষ টাকা দেন। যার বিপরীতে জাহানুর বেগমকে প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা সুদ প্রদান করতে হবে।
এভাবে দীর্ঘ ১৮ মাস ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। অবশেষে চলতি বছরের ২০মে স্থানীয় সাক্ষীগণের সামনে জাহানুর বেগম আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র আসল ২ লক্ষ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু আসল ২লক্ষ টাকা বুঝে পেলেও কৌশলে জাহানুর বেগমের ফাঁকা চেকের পাতা ৪টি, জমির দলিল ও স্ট্যাম্প ফেরত দেননি। চেক ও দলিল চাইতে গেলে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু গালাগালি ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন।
একপর্যায় চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু ৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দাবী করে চেক ডিজঅনার করে জাহানুর বেগমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতে জাহানুর বেগম নিরুপায় হয়ে দাদন ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র বিরুদ্ধে আদিতমারী থানা অভিযোগ দায়ের করেন।
অপরদিকে প্রায় ২ বছর পূর্বে আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের দক্ষিন বত্রিশ হাজারী (হেলিপ্যাড) গ্রামের মমিন উল্লাহর স্ত্রী জাহানারা বেগমের জরুরী চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হলে দাদন ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র নিকট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নেন। উক্ত টাকার জামানত হিসেবে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও সোনালী ব্যাংক, আদিতমারী শাখার একটি ফাঁকা চেকের পাতা নিয়ে টাকা দেন। সেই টাকার বিপরীদে প্রতিমাসে ৯ হাজার ৭০০ টাকা সুদ দেন।
এভাবে দীর্ঘ ৮ মাস সুদের টাকা দেওয়ার পরে সুদে আসলে এবারে মোট ৭৭ হাজার ৬০০টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ জাহানারা বেগম স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত চাইলে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু আজকাল করে নানান অজুহাতে টালবাহান করেন। এমনকি স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র সাপ্টিবাড়ী বাজারস্থ কসমেটিক্সের দোকান গিয়ে স্ট্যাম্প ও চেক ফেরত চাইলে তাকে গালিগালাজ সহ বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদান করে তাড়িয়ে দেয়।
এরই এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৯ মার্চ আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে জাহানারা বেগমকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এতে জাহানারা বেগম নিরুপায় হয়ে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র বিরুদ্ধে আদিতমারী থানা অভিযোগ দায়ের করেন।
গৃহবধূ জাহানুর ও জাহানারা জানান, দাদন (সুদ) ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র বিরুদ্ধে আদিতমারী থানা পৃথক পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই দাদন ব্যবসায়ী সুদে-আসলে টাকা পরিশোধ করে নিয়ে আবারো লাখ লাখ টাকা দাবী করার তার বিচার চাই।
দক্ষিন বত্রিশ হাজারী (হেলিপ্যাড) গ্রামের খয়বল আলী (৫৫), আনোয়ারা (৫০) ও ছকিনা বেগম (৫০) বলেন, জাহানুর ও জাহানারা বিপদে পড়ে দাদন ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র কাছে সুদের উপর টাকা নিয়েছে। দীঘদিন ধরে মাসে মাসে সুদের টাকা দিয়েছে। আবার আসল টাকাও পরিশোধ করলেও চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে হয়রানী করছেন। এখন আবার উল্টো আসল ও লাভসহ লাখ লাখ টাকা দাবী করছেন। জাহানুর ও জাহানারা দুইজনেই নীরহ গরীব। তাদের টাকা দেওয়ার কোন উপায় নেই। আমরা এই সুদ ব্যবসায়ীর বিচার চাই। এরআগেও এই সুদ ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু’র সুদের টাকার চাপ সামাল দিতে না পেরে একজন মহিলা বিষপানে আত্নহত্যা করেছেন।
দাদন ব্যবসায়ীর কথা অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান ওরফে বাবু বলেন, আমি যার কাছে ৮ লাখ টাকা পাবো সে বলছে, কোনো টাকাই নাকি আমি পাবো না। তাই আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমরা কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়।
এ বিষয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আলী আকবর বলেন, দাদন ব্যবসা বেআইনি। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।