, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘুষ–দুর্নীতির প্রতিবাদে রাঙ্গাবালীতে কৃষকদের মানববন্ধন

  • প্রকাশের সময় : ৫ ঘন্টা আগে
  • ১৬ পড়া হয়েছে

সাব্বির কাজী, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) কাজী মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা সদরের বাহেরচর বাজার সংলগ্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, তহসিলদার কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম ভূমি সংক্রান্ত প্রায় সব কাজেই ঘুষ দাবি করেন। নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, হোল্ডিং অনুমোদন, মিউটেশন, সরকারি খাল–পুকুর খাস আদায়সহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হতদরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে ফী’র অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। টাকা না দিলে হয়রানি করা হয়, দালালদের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, ফাইল আটকে রাখা হয় বা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার নামেও নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে টাকা।

পূর্ব বাহেরচরের কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন,

আমার ১২ কড়া জমির মিউটেশনের জন্য তহসিলদার ৮ হাজার টাকা চেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। উল্টো হুমকি দিয়েছে দলিল বাতিল করে দেবে।

কাউখালির কৃষক গোলাম রাব্বি অভিযোগ করেন,

জাহিদ তহসিলদার জমি রেকর্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ভেকু ব্যবহারের কথা বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

বাহেরচর বাজারের ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া বলেন,

আমলিবাড়িয়া মৌজার একটি খাল লিজ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয়, কিন্তু খালও দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। উল্টো হুমকি দেয় টাকা ফেরত চাইলে।

বাহেরচরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মুন্সি বলেন, একটি ঘাট খাস আদায়ের নামে দুই পক্ষকে দিয়ে ঝামেলা তৈরি করছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে। এখন দুই পক্ষই ঐ ঘাটের দখল নেয়ার জন্য মারামারি করে।

ছোটবাইশদিয়ার কৃষক জামাল মিয়া বলেন,

তরমুজ চাষের জমিতে লোনা পানি আটকাতে বেড়িবাঁধ দিতে গেলে বাধা দেয়। বলে, ‘তুমি যে ভেকু ব্যবহার করো, সেই ভেকুসহ ধরে নিয়ে চালান দিয়ে দেবো।’ আগে একরপ্রতি দাখিলা কাটতে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা লাগতো, এখন নিচ্ছে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা।

মানববন্ধনে বক্তারা দুর্নীতিবাজ তহসিলদারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এতে স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দুর্নীতির একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। তহসিলদার জাহিদুল ইসলাম নিজের নিয়ন্ত্রিত দালাল চক্রের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন বলে দাবি করেন তারা। দিনের বেলায় অফিসে তাকে সচরাচর না পাওয়া গেলেও রাতে দালালদের উপস্থিতিতে অফিসে লেনদেনের কার্যক্রম চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সাংবাদিকরা যখন তার কর্মকাণ্ডের তথ্য–চিত্র ধারণ করতে যান, তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটান বলে জানা গেছে। ঘুষ না দিলে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা তার নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এ দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে সাধারণ কৃষকদের পক্ষে জমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। তাই তারা প্রশাসনের কাছে দুর্নীতিবাজ তহসিলদারের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম কে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন,

আজকে কৃষকদের মানববন্ধনের বিষয়ে আমি অবগত নই, জেলা পরিষদের মিটিংয়ে ছিলাম। তহসিলদারের বিরুদ্ধে ওঠা পূর্বের অভিযোগের বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা বিষয়টি দেখছেন। আজকের মানববন্ধন ও কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।

জনপ্রিয়

ঘুষ–দুর্নীতির প্রতিবাদে রাঙ্গাবালীতে কৃষকদের মানববন্ধন

প্রকাশের সময় : ৫ ঘন্টা আগে

সাব্বির কাজী, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (তহসিলদার) কাজী মো. জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা সদরের বাহেরচর বাজার সংলগ্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, তহসিলদার কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম ভূমি সংক্রান্ত প্রায় সব কাজেই ঘুষ দাবি করেন। নিজস্ব দালাল চক্রের মাধ্যমে অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর, হোল্ডিং অনুমোদন, মিউটেশন, সরকারি খাল–পুকুর খাস আদায়সহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হতদরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে ফী’র অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ হিসেবে নেন। টাকা না দিলে হয়রানি করা হয়, দালালদের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, ফাইল আটকে রাখা হয় বা আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার নামেও নিয়েছেন অনেকের কাছ থেকে টাকা।

পূর্ব বাহেরচরের কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন,

আমার ১২ কড়া জমির মিউটেশনের জন্য তহসিলদার ৮ হাজার টাকা চেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। উল্টো হুমকি দিয়েছে দলিল বাতিল করে দেবে।

কাউখালির কৃষক গোলাম রাব্বি অভিযোগ করেন,

জাহিদ তহসিলদার জমি রেকর্ড করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছে। পরে ভেকু ব্যবহারের কথা বলে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

বাহেরচর বাজারের ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়া বলেন,

আমলিবাড়িয়া মৌজার একটি খাল লিজ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেয়, কিন্তু খালও দেয়নি, টাকাও ফেরত দেয়নি। উল্টো হুমকি দেয় টাকা ফেরত চাইলে।

বাহেরচরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মুন্সি বলেন, একটি ঘাট খাস আদায়ের নামে দুই পক্ষকে দিয়ে ঝামেলা তৈরি করছে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে। এখন দুই পক্ষই ঐ ঘাটের দখল নেয়ার জন্য মারামারি করে।

ছোটবাইশদিয়ার কৃষক জামাল মিয়া বলেন,

তরমুজ চাষের জমিতে লোনা পানি আটকাতে বেড়িবাঁধ দিতে গেলে বাধা দেয়। বলে, ‘তুমি যে ভেকু ব্যবহার করো, সেই ভেকুসহ ধরে নিয়ে চালান দিয়ে দেবো।’ আগে একরপ্রতি দাখিলা কাটতে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা লাগতো, এখন নিচ্ছে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা।

মানববন্ধনে বক্তারা দুর্নীতিবাজ তহসিলদারের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এতে স্থানীয় কৃষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দুর্নীতির একচ্ছত্র দৌরাত্ম্য। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলেই অভিযোগ স্থানীয়দের। তহসিলদার জাহিদুল ইসলাম নিজের নিয়ন্ত্রিত দালাল চক্রের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন বলে দাবি করেন তারা। দিনের বেলায় অফিসে তাকে সচরাচর না পাওয়া গেলেও রাতে দালালদের উপস্থিতিতে অফিসে লেনদেনের কার্যক্রম চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি সাংবাদিকরা যখন তার কর্মকাণ্ডের তথ্য–চিত্র ধারণ করতে যান, তখন তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটান বলে জানা গেছে। ঘুষ না দিলে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করা তার নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এ দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে সাধারণ কৃষকদের পক্ষে জমি সংক্রান্ত কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। তাই তারা প্রশাসনের কাছে দুর্নীতিবাজ তহসিলদারের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

 

এ বিষয়ে জানতে কাজী মো. জাহিদুল ইসলাম কে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন,

আজকে কৃষকদের মানববন্ধনের বিষয়ে আমি অবগত নই, জেলা পরিষদের মিটিংয়ে ছিলাম। তহসিলদারের বিরুদ্ধে ওঠা পূর্বের অভিযোগের বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা বিষয়টি দেখছেন। আজকের মানববন্ধন ও কৃষকদের অভিযোগের বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।